B.A. HONOURS IN EDUCATION (Educational Psychology-I ) Unit –I (মনোবিজ্ঞানের ভূমিকা, অর্থ এবং সংজ্ঞা, ● শিক্ষাগত মনোবিজ্ঞানের প্রকৃতি এবং পরিধি)

B.A. HONOURS IN EDUCATION
Semester-1st
(CC-2) : Educational Psychology-I
Unit –I:
● Introduction to Psychology, Meaning, and Definition, ● Nature and Scope of Educational Psychology, 
Introduction to Psychology :-
দর্শন হলো পৃথিবী সম্পর্কে জ্ঞান আহরণের একমাত্র পথ যা দর্শন শাস্ত্রের মধ্যে অন্তর্গত। আলোচনা প্রসঙ্গে মনোবিদ্যার ভূমিকা কি ? সে বিষয় সম্পর্কে জানতে গেলে প্রথমেই প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টোটল এর কথা আসে।
তাকে মনোবিদ্যার আদি প্রণেতাও বলা যায়। তার De  Anima নামে বইটিতে সাইকোলজি সম্পর্কে একটি পৃথক বিজ্ঞান হিসেবে তিনি স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
Meaning of Psychology :-
মনোবিদ্যার  ইংরাজি প্রতিশব্দ PSYCHOLOGY শব্দটি গ্রিক ভাষায় Psyche থেকে এসেছে যার অর্থ হল আত্মা (Soul) এবং Logos কথার অর্থ হল বিজ্ঞান বা যুক্তিপূর্ণ তথ্য (Science) । অর্থাৎ প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকদের ধারণা অনুসারে মনোবিদ্যা হল আত্মার অনুশীলনকারী বিজ্ঞান (Psychology is the Science of Soul) ।
bengaliedu.in
Definition of Psychology :-
মনোবিদ Maher মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, –  মনোবিজ্ঞান হল দর্শনের সেই শাখা যা মানুষের আত্মা নিয়ে আলোচনা করে।
কিন্তু আত্মাকে পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণ যোগ্য নয়। তাই আত্মার বিজ্ঞান বলা যুক্তিযুক্ত নয়।
পরবর্তীকালে মনোবিদগণ মনোবিজ্ঞানকে মন( Mind)এর বিজ্ঞান বলে চিহ্নিত করলেন। অর্থাৎ মনোবিদ Hoffding বলেন,  মনোবিজ্ঞান হল মনের বিজ্ঞান।(Paschology is the Science of Mind)
মন শব্দটির অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক । মন সম্পর্কে দার্শনিকগণের মধ্যেও মতভেদ দেখা যায়। মন বা আত্মা কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই মনোবিদ্যা মনের বিজ্ঞান এটা বলা যায় না।
পরবর্তীকালে মনোবিদ Angell, William James প্রমুখ মনোবিদদের মতে মনোবিজ্ঞান হল চেতনার বিজ্ঞান (Science of Consciousness)।
 মনোবিজ্ঞানকে চেতনার অনুশীলণকারী বিজ্ঞান হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন Lock ,Hobbes প্রমূখ দার্শনিকরা এবং  Wundt প্রমুখ মনোবিদরা।
পরবর্তীকালে  চেতনার অনুশীলনকারী বিজ্ঞান হিসেবে ব্যক্তির  অন্তরদর্শন এবং নৈবর্তিকতা সম্পূর্ণভাবে  জানতে পারি না। চেতনা একটি অপমানিত অনুমান মাত্র। মনোবিদ্যার চেতনার বিজ্ঞান হিসেবে ও তার গুরুত্ব হারালো।
পরবর্তীকালে  Watson, Mc Dougall, Woodworth প্রমুখ মনোবিদরা মনোবিজ্ঞানকে আচরণের বিজ্ঞান বলে গণ্য করেন।
মনোবিদ Watson  এর মতে , মনোবিজ্ঞান হল আচরণ সম্পর্কীয়  বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান ।
( Psychology is the Science of human behaviour)
মনোবিদ William MC Dougal এর মতে, মনোবিদ্যা হলো প্রাণীর আচরণ অনুশীলনকারী বিজ্ঞান। ( Psychology is the positive science of the behaviour of living beings)
আচরনবাদী মনোবিদ Woodworth এর মতে, পারিপার্শ্বিকের প্রেক্ষিতে  ক্রিয়া-কলাপের বিজ্ঞান হলো মনোবিজ্ঞান। (Psychology is the Science of activities in relation to his environment)
          সর্বোপরি মনোবিজ্ঞানের সংজ্ঞা সম্পর্কে আচরণবাদীদের বক্তব্য অনুসারে বলা যায়, মনোবিজ্ঞান জীবের আচরণ সম্বন্ধীয় বিষয়-নিষ্ট বিজ্ঞান জীবের আচরণের ভিত্তিতে মানসিক প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ নিয়ম পরিমাপ ব্যাখ্যা করে এবং মানসিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ব্যাখ্যা করে।

মনোবিজ্ঞানের প্রকৃতি:-
১. মনোবিজ্ঞান হল বিষয়নিষ্ঠ বিজ্ঞান ।
২. মনোবিজ্ঞান হল পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ সাপেক্ষ।
৩. মনোবিজ্ঞানে দৈহিক ও মানসিক উভয় ধরনের প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করে।
৪. মনোবিজ্ঞানে আচরণ হল প্রাণী ও পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ার ফল ।

মনোবিদ্যার বিভিন্ন শাখা:-
জার্মান মনোবিদ ভূণ্ড (W.Wundt ) ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির লাইপোজিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম এক পরীক্ষাগার স্থাপন করেন। এই পরীক্ষাগার (Psychological Laboratory) ।
মনোবিদ্যার দুটো মূল শাখা হলো :-
 ১. বিশুদ্ধ মনোবিদ্যা বা তাত্ত্বিক মনোবিদ্যা :–  যে কোনো ধরনের পরীক্ষামূলক পরিস্থিতিতে মানসিক প্রক্রিয়া আচরণ ইত্যাদি গতিপ্রকৃতি অনুশীলন করা এবং তাদের বিশেষ ও সামগ্রিক জ্ঞান সংগ্রহ করাই হলো বিশুদ্ধ মনোবিদ্যা ।
২.  অপর শাখাটি হল –  ফলিত মনোবিদ্যা বা প্রয়োগমূলক মনোবিদ্যা :-  এর উদ্দেশ্য হল মানসিক প্রক্রিয়া আচরণ ইত্যাদি সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান মানুষের জীবনযাত্রার প্রয়োগের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করা ।
bengaliedu.in

Educational Psychology :- 
                        শিক্ষা মনোবিদ্যা হলো,  প্রয়োগমূলক মনোবিদ্যার সেই শাখা যার মধ্যে আমরা মানুষের শিক্ষাকালীন আচরণকেই অনুশীলন করে থাকি । আবার অন্যান্য মনোবিদদের মতে,  শিক্ষা মনোবিদ্যা হলো  মনোবিদ্যার সেই শাখা যা ব্যক্তির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার বিকাশে ধারাকে অনুশীলন করে।
স্কিনার (Schener) বলেছেন ,  শিক্ষা মনোবিজ্ঞান হল মনোবিজ্ঞানের সেই শাখা যা কেবল শিখন ও শিক্ষণ নিয়ে কাজ করে।
মনোবিদ কোলেন্সিক (Kolensik) মনে করেন ,  শিক্ষা প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা ও উন্নত করতে মনোবিজ্ঞানের যেসব তথ্য ও নীতি সহায়ক সেগুলির অনুশীলনী হল শিক্ষা মনোবিজ্ঞান ।
মনোবিদ পিল (Peel) এর মতে , শিক্ষা মনোবিজ্ঞান হল শিক্ষার বিজ্ঞান।

শিক্ষা- মনোবিজ্ঞানের প্রকৃতি :-
১.  শিক্ষামূলক জ্ঞান বিজ্ঞানের একটি পৃথক বিষয় হিসেবে স্বীকৃত ।
২.  শিক্ষামূলক বিজ্ঞানের পদ্ধতিগত দিক থেকেও বিভিন্ন ভাবে  অন্তদর্শন, কেস স্টাডি, তুলনামূলক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় ।
৩.  শিক্ষামূলক বিজ্ঞান একটি আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান ।
৪.  শিক্ষামূলক বিজ্ঞান একটি গতিশীল বিষয় ।
৫. ব্যক্তি স্বতন্ত্র নীতি নিয়ে চলে যা শিক্ষার্থীর শিক্ষাকালীন আচরণ বিশ্লেষণ, নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাস পাওয়া যায় ।

শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধি :-
                           অনান্য বিজ্ঞানের মতো শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের সাহায্যে শিখন – শিক্ষণ প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভাবে শ্রেণিকক্ষে হয়ে থাকে, কারণ শিক্ষার্থীর শিক্ষামূলক চাহিদা পরিতৃপতি ঘটানোর এবং তার ব্যক্তিসত্তার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটানোর জন্য এই শিক্ষা মনোবিজ্ঞানকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বা উদ্দেশ্য অবলম্বন করতে হয় । তাই আধুনিক যুগে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধি খুবই ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
১. শিখন প্রক্রিয়া :- শিখনের প্রকৃতি অনুযায়ী শিখন প্রক্রিয়া শিক্ষা মনোবিজ্ঞান খুবই উপযোগী।
২.  বিকাশের ধারা :-  পরিবর্তনশীল পরিবেশে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর বিকাশ স ধারার স্তর ভেদ অনুসারে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধি গুরুত্বপূর্ণ ।
৩.  ব্যক্তিসত্তার বিকাশ :- ব্যক্তিসত্তার বিকাশ কি ? এবং ব্যক্তিসত্তার পরিবেশের সাথে সঙ্গতিবিধানের মাধ্যমে যে বিকাশের প্রক্রিয়া তা হয়ে থাকে ।
৪. শিখন সঞ্চালন:-  প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শ্রেণীতে শিখন সঞ্চালন আদেও হয়েছে কিনা বা শিখন সঞ্চালনের সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনই হলো কিনা, তা শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধির মধ্যে অন্তর্গত।
৫. পরীক্ষামূল্যায়ন ব্যবস্থা :- পরীক্ষা মূল্যয়ন ব্যবস্থাও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে শিক্ষা মনোবিজ্ঞান এর পরিধির মধ্যে অন্তর্গত। কারণ সংশোধনী পাঠ শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধির মধ্যে অন্তর্গত। প্রত্যেক শিক্ষার্থী কিভাবে সংশোধনী পাঠ দেওয়া যায় , তা এই মনোবিজ্ঞানের মধ্যে অন্তর্গত।
bengaliedu.in
৬. মানসিক স্বাস্থ্য :-  মানসিক সু -স্বাস্থ্যের অধিকারী শিক্ষার্থীকে হতে হলে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানগত পদ্ধতি অনুসরণ করে  বিষয়বস্তু শিখতে হবে। তাই শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধির মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য অন্তর্গত।
৭. নির্দেশনা ও পরামর্শদান :-  আধুনিক শিক্ষা বিজ্ঞানে শিক্ষাবিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করতে হলে অবশ্যই নির্দেশনা ও পরামর্শদানের প্রয়োগের প্রভাব ব্যাপকভাবে দেখা যায়।
৮. ব্যতিক্রমী শিশুদের শিক্ষা :- ব্যতিক্রমী অর্থাৎ প্রতিভাবান শিক্ষার্থী, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থী  এবং বিভিন্ন প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রেও  শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং  যার মধ্যে দিয়ে  সমস্ত শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে আনা যায় ।
৯. শ্রেণিকক্ষ পরিচালনার ক্ষেত্রে :-  শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধি ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অবলম্বন করে আছে।
১০. ব্যক্তিস্বতন্ত্র নীতি:- ব্যক্তিস্বতন্ত্র নীতি ও শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধির মধ্যে অন্তর্গত কারণ প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিজস্ব চাহিদা অনুযারী শিক্ষা গ্রহণের প্রয়াস ,এবং বিভিন  বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান শিক্ষার্থীরা ব্যক্তি কেন্দ্রিকভাবে গ্রহণ করে থাকে। যা শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের পরিধির মধ্যে অন্তর্গত।
                  সুতরাং শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের মাধ্যমে কিভাবে শিক্ষক মহাশয় শিক্ষার্থীকে সঠিক শিক্ষা দেবেন তার পরিপূর্ণ পরিচর্যা মূলক বিস্তারিত তথ্য শিক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের পরিধির মধ্যে অন্তর্গত যা আজকে  শিশু কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে উঠেছে।।

 


Share
error: Content is protected !!