47 Views
Charvak philosophy
—- Charvak.
A. Meaning of Charvak Philosophy :
-
ভারতীয় দর্শনের মধ্যে চার্বাক দর্শনকে জড়বাদী দর্শন বলা হয় ।
এই দর্শনের মূল উপাদান হল জড়। যা থেকে জগতের সব কিছুই সৃষ্টি। আত্মা বা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে স্বীকার করে না বলেই এই দর্শন বেদ এবং উপনিষদকে প্রত্যাখ্যান করেছে ।
-
চার্বাক নামে এক ভারতীয় ঋষি এই দর্শনের সূত্রপাত করেন।
পরবর্তীতে এই দর্শনের প্রবক্তা হিসাবে বৃহস্পতি, লোক্যবাদ প্রভৃতির নাম উল্লেখ যোগ্য।
তিনি প্রথম বলেন যে , সমস্ত সৃষ্টির প্রধান উপাদান বস্তুু। আর এই বস্তুুর বাইরে পরম সত্য বলে কিছু নেই।
-
চার্বাক শব্দটি এসেছে চর্ব ধাতু থেকে। চর্ব ধাতুর অর্থ হলো – চর্বন করা বা খাওয়া ।
যার অর্থ হল – খাও দাও ফুর্তি কর ।
-
অর্থাৎ চার্বাকবাদীদের মত অনুসারে , সুখভোগ জীবনের একমাত্র লক্ষ্য, পাপ বা পূর্ণ বলে কিছু নেই।
ইন্দ্রিয় বস্তু সন্নিকর্ষের (Sense object contractমধ্য দিয়েই আমরা সবকিছু জানি। চার্বাক দার্শনিকরা জীবনের মৌলিক তথ্যকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দুটি তত্ত্বের কথা বলেছেন একটি হলো জড়তত্ত্ব অপরটি হল চেতন তত্ত্ব।
-
চেতন তত্ত্বে কেবল চেতনা সম্পর্কে মতবাদকে স্বীকার করে বলে একে আধ্যাত্মবাদ বলা হয় ।
-
সাধারণ মানুষের সমস্যা ও মনোভাব চার্বাক দর্শনে প্রতিফলিত হয়েছে বলে, একে লোকায়িত দর্শনও বলা হয়।
-
চার্বাক দর্শন বেদ বিরোধী ধারণা গুলি বিরুদ্ধে ভারতীয়দের মধ্যে যুক্তিবাদী চিন্তা ধারার প্রকাশ ঘটিয়েছে বলে, একে প্রতিবাদী দর্শনও বলা হয়।
-
স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী যান্ত্রিকভাবে বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে তাই চারবাক দর্শনকে যান্ত্রিক *প্রকৃতিবাদও* বলা যায়।
-
আবার দর্শনের নানা বস্তু ও বিভিন্ন ঘটনা প্রত্যক্ষনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে বলে এই দর্শনকে *প্রত্যক্ষবাদ* দর্শনও বলা হয়ে থাকে।
B. Epistemology of Charvak Philosophy :
চাবার্ক দর্শন মূলত জ্ঞান তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রত্যক্ষ, অনুমান এবং শব্দ এই তিনটি উপজীব্য বিষয় হল জ্ঞানতত্ত্ব।
-
প্রত্যক্ষ (Perception):
চার্বাক দর্শনে প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমা বা জ্ঞানের উৎস। যথার্থ জ্ঞান হল প্রমা এবং যথার্থ জ্ঞানের উৎস হল প্রমাণ। তাই তাদের মত অনুসারে , প্রত্যক্ষ হলো মন ও পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সংযোগের ফলে সিদ্ধ প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা । প্রত্যক্ষর মধ্যে যা পাওয়া যায় না তার অস্তিত্ব নেই।
এই প্রত্যক্ষ দুই প্রকারের –
-
এক বাহ্য প্রত্যক্ষ ঃ- যা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বস্তুগত অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রক্রিয়া মাত্র।
-
অপর একটি প্রত্যক্ষ হলো মানস প্রত্যক্ষ ঃ- যা মনের সাহায্যে সুখ- দুঃখ ইত্যাদি মানসিক অবস্থার জ্ঞানের স্বরূপ সম্পর্কে অনুসন্ধান করা যায়।
-
অনুমান (Infrence) :-
চার্বাকবাদীরা অনুমানকে প্রমাণ বলে স্বীকার করেননি। অনুমান হলো ব্যাপ্তি নির্ভর। ধোঁয়া দেখলেই যে, সেখানে আগুন আছে বা যেখানে আগুন, সেখানেই ধোঁয়া এমন কথা বলা যায় না।
সুতরাং ব্যাপ্তি জ্ঞান অনুমানের সাহায্যে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। এমনকি কার্য-কারণ নীতির মাধ্যমেও ব্যাপ্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। অনুমান ব্যাপ্তি জ্ঞান সাপেক্ষ ।যা কোন প্রমাণের দ্বারাই লাভ করা সম্ভব নয়।
সেহেতু অনুমান অসিদ্ধ। তবে অনুমান লোক ব্যবহারের সহায়ক।
চাবার্ক বাদীদের মতে, সবকিছুই স্বাভাবিক বা আকস্মিক । বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোন কিছুর ঠিক নিয়ম নেই। এই মতবাদকেই আবার চার্বাক বাদীরা স্বভাববাদ ও বলেছেন।
ক্ষতি , অপ, তেজ, মরুত এই এই চারটি মহা ভূতের অস্তিত্বকেই স্বীকার করেছেন।
-
শব্দ (Testimony):-
চার্বাকবাদীরা অনুমানের ন্যায় শব্দকেও প্রমাণ হিসেবে স্বীকার করেননি। শব্দ শুনে অর্থকে আমরা অনুমান করি, প্রত্যক্ষ করা হয় না।
অনুমান যদি প্রমাণন্য না হয়ে থাকে তাহলে শব্দও প্রমাণ নয়। বেদ বিরোধী চার্বাকবাদীরা মনে করেন প্রত্যক্ষই একমাত্র প্রমাণ।
C. Metaphysic of Charvak Philosophy:
চার্বাক দর্শনে তত্ত্ববিদ্যা ও জ্ঞানতত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত।
চার্বাক সম্প্রদায়েরা প্রত্যক্ষকেই একমাত্র প্রমাণ হিসেবে স্বীকার করেছেন। তাদের মধ্যে একমাত্র সত্য হলো বস্তু বা Matter.
প্রত্যক্ষনের বাইরে কোন অস্তিত্ব নেই । বাস্তব জগতে চারটি মহাভূত -ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ। তথা মাটি ,জল, আগুন ও বাতাস স্বীকার করে অনুমানের দ্বারা । অন্য কোন বস্তুর অস্তিত্বকে স্বীকার করা যায় না । তাই বোম্ব বা আকাশের অস্তিত্বও স্বীকার করে না। এই চারটি সমন্বয়েই জীবনের সৃষ্টি।
মন সম্পর্কে চার্বাক বাদীদের মত হল , প্রত্যেক দেহই চৈতন্য গুনরূপে থাকে। চৈতন্য জলের দ্বারা উৎপন্ন। পান- চুন- সুপারি কোনোটিতেই লাল গুণটি নেই । এই তিনটি যখন একত্রে চর্বিত হয়, তখনই তাদের সংমিশ্রণে লাল রঙ দেখা যায়। ঠিক তেমনি চারটি উপাদান যখন চৈতন্য সঙ্গে সংযুক্ত হয় ,তখনই জীবন বিশিষ্ট জীবকে আমরা প্রত্যক্ষ করি।
-
স্বাভাবিকভাবে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী যান্ত্রিকভাবে বিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে তাই চারবাক দর্শনকে যান্ত্রিক *প্রকৃতিবাদও* বলা যায়।
-
আবার দর্শনের নানা বস্তু ও বিভিন্ন ঘটনা প্রত্যক্ষনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে বলে এই দর্শনকে *প্রত্যক্ষবাদ* দর্শনও বলা হয়ে থাকে।
-
চার্বাক দর্শন বেদ বিরোধী ধারণা গুলি বিরুদ্ধে ভারতীয়দের মধ্যে যুক্তিবাদী চিন্তা ধারার প্রকাশ ঘটিয়েছে বলে, একে প্রতিবাদী দর্শনও বলা হয়।
D. Axiology of Charvak Philosophy:
চার্বাক দর্শনে নীতিবিদ্যা হলো-
জীবনের লক্ষ্য হিসাবে চারটি পুরুষার্থের ( ধম , অর্থ , কাম, মোক্ষ ) মধ্যে চার্বাক দর্শন শুধুমাত্র অর্থ ও কামকে জীবনের লক্ষ্য রূপ চিহ্নিত করেছে।
চার্বাক দর্শন অনুযায়ী চৈতন্য বিশিষ্ট দেহই হল জীবাত্মা। দৈহিক সুখ এবং ইন্দ্রিয় সুখীই জীবনের পরম লক্ষ্য।
চার্বাক দর্শনকে সুখবাদ (Hedonism) দর্শন ও বলা যায়। কারণ ইন্দ্রিয় সুখভোগ এই দর্শনের একমাত্র কামনার বস্তু। সংসারে দুঃখ- সুখ -বিরহ সবই আছে ,কিন্তু মানুষ চাই সুখ- আনন্দ ইত্যাদি,যা তার
জীবনের কাম্য। অন্ধকার না থাকলে যেমন আলোর প্রয়োজন হয় না । ঠিক তেমনি দুঃখ না থাকলে সুখকেও বোঝা যায় না।
দুঃখের পরই আছে সুখানুভূতি, যা সকল মানুষই সুখ- আনন্দের সমান অধিকারী।
সুখ প্রপ্তি একমাত্র সত্য ,দুঃখ কখনো নয় । অর্থাৎ চার্বাক দর্শনে সাধারণ জনমানুষের সমস্যা মনোভাব গুলি চার্বাক দর্শনে আলোচিত হয়েছে বলে একে লোকায়িত দর্শনও বলা হয়ে থাকে।
E. Charvak Philosophy and Education:
শিক্ষায় চার্বাক দর্শনকের গুরুত্ব।
1. Aim of Education:
-
শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে।
-
চার্বাক দর্শন হলো বস্তুবাদী দর্শন তাই ব্যক্তি ও সমাজের উন্নতি- স্বাধন হলো শিক্ষার লক্ষ্য।
-
প্রত্যক্ষ ইন্দ্রিয় মাধ্যমে বস্তুর সন্নিকর্ষের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যা ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রত্যক্ষ তাহায় সত্য।
-
শিক্ষার লক্ষ্য হলো ব্যক্তি ও সমাজের উন্নতি সাধন।
2. Curriculum of Education:
-
চার্বাক দর্শনের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পাঠ্যক্রম তৈরি হবে কর্মকেন্দ্রিক ,বৃত্তিমুখী ,শিল্পচর্চা ,শিশুর আগ্রহের উপর ভিত্তি করে।
-
পাঠক্রম হবে শিক্ষার্থীর সকল রকম অভিজ্ঞতা উপর ভিত্তি করে।
3. Methods of Education:
-
শিখনের বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী শিক্ষা পদ্ধতি প্রদান করতে হবে।
-
আত্মশঙ্খলায় শিখন প্রক্রিয়ার মূল পদক্ষেপ হওয়া উচিত।
-
আনন্দময়ী শিখন পদ্ধতি।
-
ইন্দ্রিয় পরিমার্জনা।
4. Discipline of Education:
-
শিক্ষার্থীর স্বাধীনতা ও তার বর্তমান জীবনমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা করা ।
-
শিক্ষার্থীর স্বাচ্ছন্দ ও স্বাধীন বিকাশের মধ্য দিয়ে জীবন অভিজ্ঞতা দিয়ে তা গ্রহণ করবে।
5. Teacher of Education:
-
আধুনিক শিক্ষা নীতিতে ইন্দ্রিয় লব্ধ অভিজ্ঞতা উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইন্দ্র ভিত্তিক অভিজ্ঞতা নির্ভর শিক্ষাদান পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।
6. Student of Education:
-
শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা গুলির বিকাশ চার্বাক দর্শনের মধ্যে দেখা যায়।
-
শিক্ষায় আত্মশৃংখলার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
F. Educational implication of Modern Trained in Education:
আধুনিক শিক্ষায় চার্বাক দর্শনকের গুরুত্ব :-
-
আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীর অন্তর্নিহিত সম্ভাবনা গুলির বিকাশ চার্বাক দর্শনের মধ্যে দেখা যায়।
-
মানুষের জৈবিক চাহিদা গুলির মধ্য দিয়ে সুখানুভূতীর অভিমত প্রতিষ্ঠা করেছে।
-
আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য হলো ব্যক্তি ও সমাজের উন্নতি সাধন । বস্তুবাদী এই দর্শনে অভিজ্ঞতার উপযোগিতার মূল্যের উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে ।
-
শিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হয়েছে।
-
আধুনিক শিক্ষা নীতিতে ইন্দ্রিয় লব্ধ অভিজ্ঞতা উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
-
ইন্দ্র ভিত্তিক অভিজ্ঞতা নির্ভর শিক্ষাদান পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে।
-
আধুনিক শিক্ষায় আত্মশৃংখলার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেখানে মূল কথা হলো সুখ- আনন্দ ।
-
পাঠক্রমগুলির শিক্ষার্থীর সকল রকম অভিজ্ঞতা উপর ভিত্তি করে করে তোলা হচ্ছে।
সুতরাং আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে চার্বাক দর্শনের গুরুত্ব অপরিসীম । আধুনিক যুিক্ত নির্ভর অগ্রগতি মানুষ শুধু জ্ঞান আহরণ করবে না সে কর্ম প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয় ঘটিয়ে পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠবে।।