136 Views
Q. শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলি আলোচনা করো ?
শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতি গুলি আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই যে বিষয়ে আলোচনা করতে হয় ,তা হল শিক্ষা মনোবিজ্ঞান কি ? শিক্ষামনোবিজ্ঞান হল মনোবিজ্ঞানের ফলিত শাখা থেকে সৃষ্টি হয়েছে । যেখানে মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়গুলি কিভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে তা নিয়েই গঠিত শিক্ষামনোবিজ্ঞান । বিভিন্ন তথ্য গুলিকে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রেণিকক্ষে শিখন – শিক্ষন প্রক্রিয়ায় কিভাবে ব্যবহার করা যাবে সেগুলোই হল শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন পদ্ধতিগত আলোচনা ।
আধুনিক যুগে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষায় কিভাবে শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন সে নিয়ে বিভিন্ন দার্শনিকগণ বিভিন্নভাবে মত প্রকাশ করেছেন। সমাজবিজ্ঞান এবং মনোবিজ্ঞানেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে তাই মনোবিজ্ঞানকে কিভাবে শিক্ষামনোবিজ্ঞানে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসারে শ্রেণীকক্ষে প্রয়োগ করা যায় এবং কিভাবে শিক্ষামূলক আচরণ নিয়ন্ত্রণ ও আচরণ পরিমার্জন করতে সক্ষম হবে এবং শ্রেণিকক্ষে শিখনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে শিক্ষামনোবিজ্ঞানের যেসব পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা হয় ।সেগুলি হল —
১. অন্তদর্শন পদ্ধতি:-
শিক্ষামূলক বিজ্ঞানের এক অতি জনপ্রিয় পদ্ধতি হল অন্তদর্শন পদ্ধতি। যা সর্বাপেক্ষা প্রাচীন পদ্ধতি প্রথমে মনস্তত্ত্বের ওপর এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে মনুষ্যত্বের উপর প্রয়োগ করা হয়েছে। এর সাহায্যে ব্যক্তি তার চেতন মনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে অর্থাৎ অন্তদর্শনের অর্থ হলো ভেতর থেকে জানা অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা কিভাবে নিজে থেকেই নিজের জ্ঞান নির্মাণ করবে তা যানা যায় ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় বরফ ঠান্ডা জলে হাত দেওয়ার অনুভূতি ব্যক্তি সাপেক্ষ। তাই অন্তদর্শন পদ্ধতি মানসিক ব্যক্তির মানসিক অভিজ্ঞতাকে অধ্যয়ন করে দেখে যায়।
অন্তদর্শন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য গুলি হল——-
(i). চেতন মনের সম্পর্কে তথ্য জানার একমাত্র পদ্ধতি।
(ii). এটি মনোবিজ্ঞানের নিজস্ব পদ্ধতি ।
(iii). এটির সাহায্যে ব্যক্তি তার নিজের সিদ্ধান্ত নিজের মতামত গুলি সঠিক ভাবে ব্যক্ত করতে পারে।
২. সাক্ষাৎকার পদ্ধতি :-
শিক্ষামনোবিজ্ঞানের মধ্যে অন্তর্গত সাক্ষাৎকার পদ্ধতি হলো এমন এক পদ্ধতি যেখানে সাক্ষাৎকারক কথাবার্তার মাধ্যমে ব্যক্তি সম্পর্কীয় বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে এবং মূল্যায়ন করে থাকে। সাক্ষাৎকারের উদ্দেশ্য মূলত বিভিন্ন রকম হতে পারে যেমন চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার , চিকিৎসারজন্য সাক্ষাৎকার ,পরামর্শদানের জন্য সাক্ষাৎকার ইত্যাদি । এই সাক্ষাৎকার আবার ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে হয়ে থাকে সংগঠিত অসংগঠিত ভাবে হয়ে থাকে মূলত সাক্ষাৎকার পদ্ধতির প্রধান লক্ষ্য হলো কিভাবে অপর এক ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য বের করে আনা অর্থাৎ সাক্ষাৎকার এবং সাক্ষাৎকারক এই দুইয়ের মধ্যে কথাবার্তা ভাব বিনিময়ের যে প্রক্রিয়া সেটাই মনোবিজ্ঞানের দ্বিতীয় পদ্ধতি শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের সাক্ষাৎকার।
সাক্ষাৎকার পদ্ধতির কিছু বৈশিষ্ট্য হলো—–
(i). সাক্ষাৎকার এবং সাক্ষাৎকারীর মধ্যে এক পারস্পারিক সম্পর্ক বোঝাপড়া বোধ তৈরি হয় দুই এখানে সাক্ষাৎকারীর নিকটে থাকা
(ii). ছোট শিশু বা অল্প বিদ্যা, যাদের ভাষাগত অসুবিধা আছে তাদের জন্য সাক্ষাৎকার পদ্ধতি খুবই উপযোগী
(iii). ডায়াগনোসিস বা নির্ণয়ই ভিত্তিক তথ্যের ক্ষেত্রেও সাক্ষাৎকার পদ্ধতি অপরিহার্য একদিক
(iv). অস্বাভাবিক ব্যক্তিদের জন্যও সাক্ষাৎকার পদ্ধতি সমান উপযোগী ।যেখানে উভয়ের মধ্যেই প্রশ্ন করার অবকাশ থাকে এছাড়া ক্রস চেকিং এর মাধ্যমে সাক্ষাৎকারীর কাছ থেকে সত্যবাদিতা, স্বতঃস্ফূর্ততা এবং অন্তরদৃষ্টি সম্পর্কে তথ্য অবহিত করা হয়ে থাকে।
৩. পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি :-
শিক্ষা -মনোবিজ্ঞান পদ্ধতির মধ্যে অন্যতম হল পর্যবেক্ষণ পদ্ধতিত । কারণ আক্ষরিক অর্থে পর্যবেক্ষণ হলো বাইরে থেকে দেখা, সে অনুসারে তথ্য তৈরি করা ।প্রায় সকল রকম সমাজবিজ্ঞামূলক গবেষণার ক্ষেত্রে তথ্য সংগ্রহের জন্য পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে ।তাই এক মৌলিক পদ্ধতি যা ব্যক্তির বাহ্যিক আচরণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে ব্যক্তির অভ্যন্তরে থাকা যে মানসিক প্রক্রিয়া গুলি সম্পর্কে অধ্যায়ন করা যায় ।পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন- স্বাভাবিক বনাম কৃত্রিম সংগঠিত বনাম অসংগঠিত , এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী বনাম অংশগ্রহণকারী নয়, অনেক সময় খেলার মাঠে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে গিয়েও পর্যবেক্ষণের মধ্যেমে তথ্য সংগ্রহ করা যায় কিংবা শ্রেণীকক্ষের মধ্য থেকেও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য গুলি হল—-
(i) সময় সাপেক্ষ পদ্ধতি। খুব কম সময়ের মধ্যে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মধ্য দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
(ii) অর্থশাস্রয় হয় । পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে খুব একটা অর্থের প্রয়োজন হয় না ।
(iii) পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে শিক্ষার্থীরা অবগত নয় সুতরাং সেই হিসেবে পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে খুব সহজেই এবং অথেন্টিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
(iv) পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে শিক্ষার্থীদের সঠিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং শিক্ষার্থীদের বোঝা যায়।
৪. ক্লিনিকাল পদ্ধতি :-
ক্লিনিকাল পদ্ধতি বা চিকিৎসা পদ্ধতি মূলত বিজ্ঞান সম্মত ভাবে কোন তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে অপসংগতিমূলক এবং স্বাভাবিক বা কোন আচরণ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে । সাধারণত বিভিন্ন ধরনের অপসংগতিমূলক আচরণের প্রকৃতি জানার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে। যেমন অসামাজিক আচরণ মূলক শিখন সমস্যা বিদ্যালয় পাঠে অনীহা প্রভৃতি।
ক্লিনিকাল পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য গুলি হল—-
(i) ক্লিনিকাল পদ্ধতির সাহায্যে বিভিন্ন রকম ব্যক্তিদের সমস্যা চিহ্নিতকরণ করা যায় এবং সঠিক চিকিৎসা সুপারিশ নির্দেশ দেয়া যায় ।
(ii) এই পদ্ধতির সাহায্যে অপাসঙ্গতি মূলক আচরণ নির্দিষ্ট করা যায় এবং সংশোধন করা যায় ।
(iii) সামগ্রিকভাবে শিক্ষার দিকে অধ্যয়ন করা যায়। এ ছাড়া ক্লিনিক্যাল কেস স্টাডি এবং বিকাশমূলক কে স্টাডি করা যায় ।