Discuss about the Lord Curzon’s educational policy. প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি আলোচনা কর? অথবা লর্ড কার্জনের শিক্ষা সংস্কার বিশ্লেষণ কর?

বিংশ শতাব্দীর প্রাক্কালে যখন শিক্ষিত ভারতবাসীর জীবনে এক নতুন চিন্তার আলো দেখা দিল ঠিক সেই সময়েই বড়লাট হয়ে এলেন  জর্জ নাথানিয়াল কার্জন । তিনি একদিকে যেমন দক্ষ প্রশাসক ছিলেন, তেমনি তার মনোবৃত্তি ছিল ভারতীয় জাতীয়তাবোধকে ধ্বংস করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করা। তবে ভারতীয় শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে লর্ড কার্জনের শাসনকাল ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

                                                                                                                 ১৯০১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে শিমলায় ভারতের শিক্ষা সমস্যার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনার জন্য এক সম্মেলনের আহ্বান করেন , যা শিমলা শিক্ষা সম্মেলন নামে পরিচিত। কিন্তু বিশেষত ভারতীয়  জাতীয়তাবাদী চেতনাকে ধ্বংস করার সুকৌশলে শিক্ষা সংস্কার ঘোষণা করেন। এই সম্মেলনের ভারতীয় শিক্ষার এক দুর্দশা গ্রস্থ প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে যে এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য উচ্চশিক্ষা স্তরে যতটা গুরুত্ব পেয়েছে নিচুস্তরে শিক্ষা সে তুলনায় অবহেলিত হয়েছে। তাই প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তর পর্যন্ত একটি বলিষ্ঠ শিক্ষানীতির প্রয়োগে অগ্রসর হলেন।

A. প্রাথমিক শিক্ষা নীতি:-

প্রাথমিক শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে যেসব নীতি গ্রহণ করেছিলেন তার বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়। সেগুলি হল-

১. প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের উপরই প্রধান কর্তব্য থাকবে।

২. প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ্যক্রম পরিবর্তন রূপে পাঠক্রম হবে সহজ সরল এবং পরিবেশের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

৩. প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা।

৪. প্রাথমিক শিক্ষকের মান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষক-  শিখনের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়।

B. মাধ্যমিক শিক্ষা নীতি:-

প্রাথমিক শিক্ষlর নেয় মাধ্যমিক শিক্ষানীতির ওপর যেসব সুপারিশ গুলি করেছিলেন, সেগুলি হল-

১. মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির অনুমোদন পাওয়ার নিয়ম কঠিনতম করতে হবে।

২. সেই অনুসারে বিদ্যালয়গুলি বিশ্ববিদ্যালয়ের কঠিন নিয়ম মেনে চলবে।

৩.  স্বীকৃত বা অনুমোদিত বিদ্যালয়গুলি প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য ছাত্র প্রেরণ করতে পারবে।

৪. বিদ্যালয়গুলিতে সরকারি পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে।

৫. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বহুমুখী পাঠক্রম প্রবর্তন করতে হবে।

C. বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষানীতি :-

 শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন । সিমলা সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯০২ সালে স্যার টমাস রালের নেতৃত্বে এক শিক্ষা কমিশন নিয়োগ করা হয়, যার  সদস্য হিসাবে  ছিলেন স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সৈয়দ হোসেন। পরবর্তিতে ভারতীয়দের বিরোধিত সত্ত্বেও ১৯০৪ সালে ২১শে মার্চ ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন নামে আর একটি বিল উপস্থাপন হয়।যা ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯০৪ নামে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা-নীতি সম্পর্কে সুপারিশ গুলি হল-

১. নতুন ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত না করে , পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকেই সংস্কার সাধন করা।

২. বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষা বিভাগের জন্য বোর্ড অফ স্টাডিজ গঠন করতে হবে।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়  কলেজেরগুলিকে অনুমোদন দেবে।

৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকার থাকবে সিন্ডিকেটর উপর। ৭ থেকে ১৫ জন সদস্যদের নিয়ে সিন্ডিকেট গঠিত হবে।

৫. বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেটের সদস্য সংখ্যা 50 এর কম 100 জনের বেশি হতে পারবে না।

৬. বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।

৭. বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রকল্যাণমূলক কর্মসূচি, যেমন- গ্রন্থাগার হোস্টেল খেলার মাঠ প্রভৃতির ব্যবস্থা থাকবে।

৮. ইন্টারমিডিয়েট স্তরকে সম্পূর্ণ ভাবে তুলে দিয়ে ৩ বছরের ডিগ্রী কোর্স প্রবর্তন করতে হবে।

৯. কলেজ গুলি সঠিকভাবে পঠন-পাঠনে তদারকির জন্য পরিদর্শন নিয়োগ করতে হবে।

১০. বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মাঞ্চল নির্বাচনের ক্ষমতা বড়লাটের ওপরই নির্ধারিত থাকবে।

D. কৃষি বিদ্যালয় :- 

এছাড়া শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে কৃষি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন । প্রতিটি প্রদেশে একটি করে কৃষি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার কথা বলেন।

E. স্ত্রী শিক্ষা প্রসার :-

-নারী শিক্ষা বিস্তারের জন্যও কার্জনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা দেখা যায়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মেয়েদের জন্য অধিক সংখক প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার কথা বলেন।

F. কারিগরি শিক্ষা :-

কারিগরি শিক্ষার জন্য ছাত্র বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা এবং বিদ্যালয়ে গুলিতে চারুকলা, শিল্পকলা, প্রভৃতি সুযোগ-সুবিধা যাতে ছাত্রছাত্রীরা পাই,তার ব্যবস্থার কথাও কার্জনের শিক্ষানীতির মধ্যে অন্তর্গত।

G. শিক্ষাক্ষেত্রে লর্ড কার্জনের অবদান:-

লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতি ভারতীয়দের আশা আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী ছিল। ১৯০২ সালে স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে সুপারিশ প্রকাশ করা হয়েছিল । যা উপেক্ষা করে ১৯০৪ সালে জাতীয়তা বিরোধী এক আইন তৈরি করেছিলেন । যা বিশ্ববিদ্যালয় আইন নামে খ্যাত। তার উদ্যত , সাম্রাজ্যবাদী , মনের জন্য মহামতি গোখলে কার্জনকে ভারতের শিক্ষা জগতের অরঙ্গজেব বলে উপহাস করেছিলেন। তা তা সত্ত্বেও ভারতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে লর্ড কার্জনের শিক্ষাগত সংস্কার বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সেগুলি হল

১. প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান।

২. কৃষি, চিকিৎসায়, কারিগরি বিদ্যার ক্ষেত্রে বৃত্তি শিক্ষা ব্যবস্থা করা।

৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষা ধর্মী ভিত্তি স্থাপন করা।

৪. ডাইরেক্টর জেনারেল অফ এডুকেশন  পদের সৃষ্টি করা।

৫. জাতীয় স্মৃতিসৌধ রক্ষার আইন প্রণয়ন করা প্রভৃতি।।

                                                                     পরিশেষে বলা যায় লর্ড কার্জনের শিক্ষানীতির নিরপেক্ষ সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে তিনি প্রথম উপলব্ধি করেন যে, সাধারণ মানুষের শিক্ষার প্রয়োজন আছে। তাই ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের কিছু মঙ্গলকর পরিবর্তন সাধন করতে সক্ষম হয়েছিল।।

Share
error: Content is protected !!