শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক  আলোচনা করুন ? (Relation-between-education-and-psychology )

Q . শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক  আলোচনা করুন ?
                   শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই জানতে হবে, শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞানের অর্থ কি?
শিক্ষা বলতে আমরা বুঝি সেই সব আচরণ আয়ত্ত করা যেগুলি সমাজ এবং ব্যক্তির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন। যাই হোক মনোবিজ্ঞান হল ব্যক্তির আচরণ সম্বন্ধীয় বিষয়-নিষ্ট বিজ্ঞান । শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞানের সম্পর্ক গভীর । তাই শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞানের সম্পর্কের মধ্যে যে সব বিষয়গুলি উল্লেখ করা প্রয়োজন , সেই বিষয়গুলি হলো –
bengaliedu.in
bengaliedu.in
১. শিক্ষার লক্ষ্য রূপে মনোবিজ্ঞান:- 
                                     বিশিষ্ট মনোবিদ অ্যাডামস (Adams)  এর কথায়  The teacher teaches John Latin. অর্থাৎ শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের শিক্ষা এবং মনোবিজ্ঞান সম্পর্ক এই অর্থে বোঝানো হয়েছে যে, শিক্ষকের যেমন বিষয়কে জানতে হবে তেমনি শিক্ষা দেওয়া কতটা শিক্ষার্থীকে হচ্ছে তা জানার জন্য শিক্ষার্থীকেও জানার প্রয়োজন । তাই শিক্ষার লক্ষ্যের একমাত্র কাজ হল মনোবিজ্ঞান সম্মত বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা যাতে শিক্ষার্থী মন এবং শিক্ষা দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা যায় ।
                                                                                              .একটি উদাহরণ দেয়া যাক-  একটি ক্লাসের শেষে শিক্ষক মহাশয় একটি ছাত্রকে প্রশ্ন করেছেন? আচ্ছা জন বলতো আজকে কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হল ; তখন জন বলছে: স্যার আমি তো জানিনা? কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হল ।এখানে প্রশ্ন হল সমস্যাটা কার? শিক্ষার্থী না শিক্ষকের ?এখন যদি শিক্ষকের হয় তাহলে তিনি অবশ্যই শিক্ষার দিকে থেকে সঠিকভাবে তথ্য দেননি কিন্তু যদি শিক্ষার্থীর হয় তাহলে উত্তর হবে শিক্ষার্থী সঠিক  শ্রবন করেনি।  কিন্তু আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞান পদ্ধতি শিক্ষার্থীরা কতটা মনোযোগ সহকারে  শ্রবন করছে  তা জানা প্রয়োজন হয় । শিক্ষকের মনোবিজ্ঞানিক শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করার ক্ষেএে  শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থাও বোঝার জন্য তিনি যথেষ্ট পারদর্শী হবেন। সেই অনুযারী তিনি শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দেবেন। তবেই শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা  ব্যবস্থা যথাযথভাবে সম্পাদন করা সম্ভব।
২.  শিক্ষার পাঠক্রম রূপে মনোবিজ্ঞান :-
                                        শিক্ষার লক্ষ্য কি হওয়া উচিত এবং কিভাবে শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে পাঠ্যসূচীর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে। তা জানার জন্য অবশ্যই মনোবিজ্ঞানের প্রয়োজন ।তার কারণ আধুনিক শিক্ষায় শুধুমাত্র শিক্ষার্থীর বিকাশ সাধন করে তা না । শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গিক বিকাশ সাধন করে ।সুতরাং শিক্ষার্থীর আগ্রহ, চাহিদা, মনোভাব প্রভৃতির উপর নির্ভর করে পাঠক্রম তৈরি হবে। যেটাই শিক্ষা মনোবিজ্ঞান মধ্যে অন্তর্গত তাই পাঠক্রম তৈরির ক্ষেত্রে শিক্ষা মনোবিজ্ঞানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৩. শিক্ষা পদ্ধতির ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞান:- 
                                             শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক – শিক্ষার্থীর সন্নিবেশের মধ্যে কোন একটি পাঠক্রমকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে গেলে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। সেক্ষেত্রে শিক্ষাবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতি গুলো শিক্ষার্থীর আগ্রহ চাহিদা অনুসারে প্রেরণ করা প্রয়োজন  ।এক্ষেত্রে শিক্ষার পদ্ধতিরূপে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় ,যেমন – প্রজেক্ট পদ্ধতি, প্রোগ্রাম পদ্ধতি, সমাস্যা সমাধান পদ্ধতি, আবিষ্কার পদ্ধতি, প্রযুক্তি নির্ভর পদ্ধতি, প্রভৃতি মনোবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ দিক।
৪. শিক্ষার মূল্যায়নরূপে মনোবিজ্ঞান:-
                                   শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কিভাবে শিক্ষার্থীকে মূল্যায়ন করতে হবে, তা জানার জন্য মনোবিজ্ঞানের পদ্ধতির সাহায্য নিতে হয় । কারণ মনোবিজ্ঞান পদ্ধতির মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। এই মূল্যায়ন শ্রেণিকক্ষে কর্ম চলাকালীন এবং কোন একটি বিশেষ অধ্যায়ের শেষে  কি্মবা একটি বিশেষ বর্ষের শেষে মূল্যায়ন হয়ে থাকে, তাই শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক, সক্রিয়তা ভিত্তিক ,ব্যক্তি স্বতন্ত্র নীতির উপর ভিত্তি রেখে শিক্ষার পদ্ধতির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে  মনোবিদ্যার গুরুত্ব অপরিসীম।
৫. অন্যান্য দিকের ক্ষেত্রেও মনোবিজ্ঞানের :-
                                                    এছাড়া অন্যান্য দিকের ক্ষেত্রেও মনোবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে শিক্ষা এবং মনোবিদ্যা শিক্ষার অন্যান্য দিকে যেমন বিদ্যালয় প্রশাসন পরিচলন ব্যবস্থা ,সংশোধন মূলক শিক্ষা, শিক্ষক শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য উন্নতি, শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা, প্রভৃতি ক্ষেত্রে গঠনমূলক – কল্যাণকর কাজের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানের সহযোগিতা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটা অপরিহার্য দিক । তাই মনোবিজ্ঞান মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষে কোন বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীর সামনে উপস্থাপন করা হতো সমস্ত নির্ভর করতে হয়। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের বিষয়গত জ্ঞান থাকা যেমন প্রয়োজন  আছে তেমনি শিক্ষার্থী সম্পর্কে  জানাও শিক্ষকের  প্রয়োজন । তবেই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা মনোবিজ্ঞান সম্মত শিক্ষা পরিচালনা সম্ভব ।
                                               সুতরাং পরিশেষে বলা যায় মনোবিজ্ঞান এবং শিক্ষাবিজ্ঞানের খুব গভীর সম্পর্ক আছে। যার ফলপ্রসু হিসাবে আধুনিক যুগে শিশুকেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যাবসথা  লক্ষ্য করা যায়।
Share
error: Content is protected !!